লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা ৩০মিনিটে লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় গেট চত্ত্বরে লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দের আয়োজনে এ মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠিত হয়।
লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক স্কুল ক্যাবিনেট প্রধান মনোয়ার হোসেন মুসা-এঁর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব, আছিবুর রহমান, সৈয়দ মাহিন ইসলাম তুর্য, সাব্বির রহমান, সুহাব উদ্দিন, সাবেক ছাত্র আনিছুর রহমান আকাশ প্রমুখ। এ মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানে লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবরে “লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিকারের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান প্রসঙ্গে” লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষে হাসিব, রাহীম, এস. এম. তাহমীদ মারুফ, জান্নাতুল ফেরদৌস লিপু, নিত্য স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রদান হয়।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, আমরা লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী। গত কয়েক বছর যাবৎ অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মে জড়িত লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক। সেই অনিয়মের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের। লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সোনালী ও গৌরবময় ঐতিহ্য থাকলেও আজ কয়েকজন শিক্ষকের কারণে সব কিছু বিলিন হয়েছে এবং শিক্ষার মান দিনদিন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে এক বছরের টিফিন ফি নেয়া হলেও বিভিন্ন কারণে বছরের ৬ মাস বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। যে কয়েক দিন টিফিন প্রদান করা হয় তাও নিম্ন মানের। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় অনেক দিন থেকে কোন কারন ছাড়াই টিফিন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতি বছর ভর্তির সময় বার্ষিক ম্যাগাজিন ফি গ্রহণ করলেও সর্বশেষ কত বছর আগে ম্যাগাজিন প্রকাশ হয়েছে তা আমরা জানি না, আইসিটি ল্যাব ফি গ্রহণ করলেও কোন দিনও আইসিটি ল্যাব খোলা হয় না বা আইসিটি ল্যাব এই বিদ্যালয়ে আছে কিনা আমরা জানি না। অত্র বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি থাকলেও নিয়মিত লাইব্রেরি খোলা হয় না বা বলতে গেলে দীর্ঘ দিন থেকে লাইব্রেরি কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। শোনা যায় লাইব্রেরির তালিকাভূক্ত বই বাহিরে বিক্রি করা হয়েছে, বর্তমানে লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বই নেই।
কয়েক বছর আগেও বিদ্যালয়ে স্কাউট রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম চালু থাকলেও আমাদের বিদ্যালয়ে এখন তেমন কোন কার্যক্রম নেই, অথচ নিয়মিত এই স্কাউট, রেড ক্রিসেন্টের ফি গ্রহণ করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞান ল্যাব, কমন রুম ফি গ্রহণ করলেও এর কোনটিও সুবিধা আমরা পাই না। নবীন বরণ, বিদায় অনুষ্ঠান, মিলাদ মাহফিলের কি গ্রহণ করলেও ছাত্রদের ছাড়াই শিক্ষকগণ নিজেদের মত করে নাম মাত্র অনুষ্ঠান করে।
আপনি অবগত আছেন যে, আমাদের বিদ্যালয়ের পাশে লালমনিরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ধুমধাম করে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলেও আমাদের বিদ্যালয়ে নামমাত্র বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান হয়েছে। অত্র বিদ্যালয়ের দরিদ্র তহবিলে নিয়মিত ফি গ্রহণ করা হয়, কিন্তু আমাদের হতদরিদ্র কাউকে কোন দিন এই ফান্ড থেকে কোন অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে মর্মে আমাদের জানা নেই।
আমাদের এই মফসল শহরের প্রতিটি বিদ্যালয়ে মানবিক (কলা) বিভাগ থাকলেও দুঃখের বিষয় একমাত্র লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মানবিক (কলা) বিভাগ নেই, কর্তৃপক্ষ কখনো এই বিভাগটি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। শিক্ষকদের গ্রুপিং এর কারণে অনেক সময় নিরামিত ক্লাস হয় না, যাহার ফল স্বরূপ ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ের পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীয় ফলাফল বারবার বিপর্যয় হয়, কখনোই কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন হচ্ছে না। এখন জেলার শিক্ষা অঙ্গণ নিয়ে আলোচনা আসলেই আমাদের বিদ্যালয়ে পড়ালেখার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকার বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে বই দিচ্ছে আমাদের, এতে সারা দেশের ন্যায় আমরাও উপকৃত। কিন্তু আমাদের বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককের অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য আমাদের ভবিষ্যত তথা বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্টের দিকে যাচ্ছে। যা ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় খবরের শিরোনাম আমাদের দেখতে হয়েছে।
উপরোক্ত বিদ্যালয়ের অনিয়মগুলো তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাদের বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে দিবেন মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।